অনুপায়ের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 



শিব সূত্র অনুসারে মুক্তির উপায় তিনটি - শাম্ভবোপায়, শাক্তোপায় ও আণবোপায়।


 " এবং শক্তিত্রযোপাযং যজ্ঝানং তত্র পশ্চিমম্।"


👉 তথাপি তার‌ও অতিরিক্ত আরেকটি উপায়ের কল্পনা করা হয় এবং সেটি হলো - অনুপায়। 


১) শাম্ভবোপায়ের থেকেও উৎকৃষ্ট উপায় হলো অনুপায়।


২) এই উপায়কে আনন্দোপায় বলা হয়।


৩) এটি পূর্ণত অনুগ্ৰহ মার্গে আধারিত।


৪) গুরুর অনুগ্ৰহে সকৃৎ উপদেশ দ্বারা পরমতত্ত্ব উন্মীলিত হয়ে ওঠে। এখানে বারংবার ভাবনা করতে হয় না। আণবোদি উপায়ে তো অসংখ্য বার ভাবনা করতে হয় এবং তারপরেই উপেয়র সাক্ষাৎকার হতে পারে, অন্যথা হয়ে পারে না। 


👉 শাম্ভবোপায়ে তীব্র শক্তিপাৎ প্রয়োজন। অনুপায়ে তীব্র-তীব্র শক্তিপাৎ করতে হয়। একটি দীপ থেকে দ্বিতীয় দীপের জ্বলে ওঠার প্রক্রিয়ার মতো অনুপায় উপায়। কোনো‌ সিদ্ধ বা যোগিনীর দর্শন মাত্র সংবিদ বা শক্তিসমাবেশ হলো এর‌ই উদাহরণ।


👉 তন্ত্রাসার অনুসারে অনুপায়ের স্বরূপ নির্বাচন‌ করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে তীব্র শক্তিপাতের পর সাধক গুরু দ্বারা পাওয়া একবার উপদেশ থেকে 'নিত্যোদিত সমাবেশ দশায়' প্রবেশ করে তার মধ্যে লয়ীভূত হয়ে যায়। এটি উপায়ের নামে তর্ক নামক যোগাঙ্গকে গ্ৰহণ করে। এটি এই পরমার্শ(বিমর্শ) করে যে কী আবশ্যকতা? নিত্যস্বরূপ, স্বপ্রকাশ নিরাবরণ তত্ত্ব কোনো‌ উপায় দ্বারা প্রকাশিত হ‌ওয়ার অপেক্ষা রাখে না। 


👉 কোনো উপায় দ্বারা তার স্বরূপ এর প্রাপ্তি, প্রতীতি, আবরণ - নিবারণ এবং তার মধ্যে অনুপ্রবেশ আদি অপ্রাসঙ্গিক। উপায়‌ও উপেয় থেকে পৃথক নয়। সমস্ত বিশ্ব‌ই চিন্মাত্রক। পরতত্ত্ব দেশ, কাল, উপাধি, আকৃতি, চিন্তন - মনন আদি সবকিছুর অতীত। তিনি স্বতন্ত্র, চিদ্ঘন, স্বাত্মস্বরূপ পরা সত্তা নিজের আত্ম স্বরূপ থেকে অভিন্ন হয়। নিজ অহমাত্মক স্বাত্মস্বরূপে সমস্ত বিশ্ব প্রতিবিম্বিত হয়। স্বাত্মপ্রত্যভিজ্ঞার উদিত হ‌ওয়ার পর মন্ত্র, পূজা, ধ্যান, চর্যা সাধনা, উপায় আদি ব্যর্থ হয়ে যায়।


 শৈবাচার্য অভিনব গুপ্ত জী এবং জয়রথ বলেন যে, "অনুপায়-সম্পর্কিত দৃষ্টি আমার স্বপ্নসূত দৃষ্টি নয়, এটি তন্ত্রপরম্পরাগত দৃষ্টি।" কারণ সিদ্ধাতন্ত্র, মালিনীর অষ্টাদশ পটল এবং মালিনীবিজয়োত্তরতন্ত্রে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং সেখানে বলা হয়েছে যে - 


"অনাযাসমনারম্ভমনুপাযং মহাফলম।

শ্রোতুমিচ্ছামি যোগেশ যোগং যোগবিদাংবর ॥


শৃণু দেবী প্রবক্ষ্যামি যোগামৃতমনুত্তমম্।

যৎপ্রাপ্য শিবতাং মর্ত্যা লভন্ত্যাযাসবর্জিতঃ ॥


তস্মাদভ্যসেত্রিত্যমবিরক্তেন চেতসা ।

স বিসর্গো মহাদেবি অত্র বিশ্রান্তিমর্হতি ॥


গুরুবক্ত্রং তদেবোক্তং শক্তিচক্রং তদুচ্যতে ।

তদেব সর্বমন্ত্রাণামুৎপত্তিস্থানমুত্তমম্ ॥


👉 সারাংশ -

১) অনুপায় হলো অনায়াস মহাফলপ্রদ যোগ।


২) অনুপায় প্রাপ্তি করলে প্রাণী অনায়াস শৈবমহাভাব প্রাপ্ত করেন।


৩) এই উপায়ের প্রাপ্তিতে বাসনার বিনাশ হয়ে যায়।


৪) এই উপায়ের নিরন্তর অভ্যাস করা উচিত।


৫) এটি বিসর্গভূমি, যেখানে বিশ্রান্তি প্রাপ্তি হয়।


৬) এই উপায়কে গুরু বক্ত্র এবং শক্তিচক্র বলা হয়।


৭) এটি সকল মন্ত্রের উৎপত্তিস্থল।


 👉  সুতরাং অনুপায় উপায় নয় উপেয়স্বরূপ ।


"পরমম্ ইতি উপেয়ৈকরুপত্বাৎ অত‌এবোক্তম্ 'উপাযাদিবিবর্জিতম্' ইতি।"


[ তথ্যসূত্র - ডঃ শ্যামাকান্ত দ্বিবেদী 'আনন্দ' জীর শিবসূত্র সিদ্ধান্ত এবং সাধনা পুস্তক থেকে স্ংগৃহীত ]


শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩

সংগ্ৰহে ও লেখনীতে - শ্রীমতি নমিতা রায় দেবীজী 

🚩কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ